বাংলাদেশে দৌড় আর শুধুই শরীরচর্চা নয়—এটি এখন একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। কয়েক বছর আগেও দৌড় ছিল স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের সীমিত অনুশীলন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খেলাটি গড়ে তুলেছে এক বিশাল কমিউনিটি। ভোরের প্রথম আলো ফোটার আগেই শহর থেকে মফস্বল, জেলা থেকে ইউনিয়ন—সব জায়গায় দেখা যায় দৌড়বিদদের পদচারণা।
সদ্য কিশোর থেকে সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ পর্যন্ত নানা বয়সের মানুষ দৌড়কে বেছে নিচ্ছেন তাদের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ হিসেবে। স্টার্ট লাইনে দাঁড়ানো রানারদের মুখে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি থাকে আত্মজয়ী হওয়ার আনন্দ। পথের ক্লান্তি পেরিয়ে ফিনিশ লাইনে পৌঁছানোর পর যে হাসিটি ফুটে ওঠে, সেটিই তাদের পরের দিনের প্রেরণা।
দৌড়ের প্রসার: গলি থেকে রাজপথ
একসময় দৌড়াতেন মূলত অ্যাথলেট বা স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিতে থাকা মানুষ। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পুরো বদলে গেছে।
- পাঁচ–সাত কিলোমিটারের স্বল্প দৌড়,
- হাফ ম্যারাথন (২১.১ কিমি),
- ফুল ম্যারাথন (৪২.২ কিমি),
- এমনকি আলট্রা ম্যারাথনের মতো দীর্ঘ পথ—
সবকিছুতেই যোগ দিচ্ছেন নবীন ও অভিজ্ঞ রানাররা।
নিয়মিত অনুশীলনে অনেকে ঝরিয়ে ফেলছেন অতিরিক্ত মেদ, আবার কেউ খুঁজে পাচ্ছেন মানসিক প্রশান্তি। দৌড় এখন ফিটনেস, শৃঙ্খলা, মানসিক শক্তি—সব কিছুর সমন্বিত মাধ্যম।
ম্যারাথন এখন উৎসব
দৌড় প্রতিযোগিতা এখন শুধু ক্রীড়া অনুষ্ঠান নয়, পুরো একটি উৎসব।
- কিট এক্সপো,
- ইভেন্ট জার্সি,
- বিব নম্বর,
- স্থানীয় সংস্কৃতি-ভিত্তিক মেডেল—
সব মিলিয়ে প্রতিটি আয়োজন যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
এসব ইভেন্ট স্থানীয় ঐতিহ্য, পার্বত্য অঞ্চল, বন–জঙ্গল বা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বার্তা ছড়াতেও ভূমিকা রাখছে। আর রানাররা সুযোগ পাচ্ছেন নতুন জায়গা জানা ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার।
স্বেচ্ছাসেবীরা বড় শক্তি
প্রতিটি ম্যারাথনে এক দলে দেখা যায় নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবীদের।
তারা বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে রানারদের হাতে তুলে দেন পানি, জুস, স্যালাইন কিংবা মৌসুমি ফল—যা দীর্ঘ পথ অতিক্রমে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
শহর থেকে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল—সব জায়গাতেই স্বেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এরা দুর্যোগকালীন সময়ে ‘ফার্স্ট রেসপন্ডার’ হিসেবেও কাজ করেন।
প্রস্তুতিহীন হলে হয় ঝুঁকি
ম্যারাথন আয়োজন জনপ্রিয় হলেও সঠিক প্রস্তুতির অভাবে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। বিশেষ করে:
- ট্র্যাক প্রস্তুতির ঘাটতি
- স্বল্প রিসোর্সে বড় আয়োজন
- ইভেন্ট-নির্ভর রানারদের চোটের ঝুঁকি
সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কঠিন পাহাড়ি বা মফস্বল এলাকায় বড় আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।
